আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার এ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম। আজ শনিবার দুটি চিঠিতেই উপসচিব আব্দুছ সালাম স্বাক্ষর করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ জানিয়েছেন, একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে।
আর অপর একটি চিঠি পান আজ শনিবার দুপুরে। রাতের চিঠি পেয়ে তিনি মামলা করতে আজ দুপুরে থানায় এজাহার দিয়ে এসেছেন।
প্রথম চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ গত ২৬ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে প্রাণনাশের হুমকি, অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য এবং নৌকার বাইরে কোনো মাস্তানি চলবে না বলে বিভিন্ন প্রকার আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। এ কারণে ইসি তাঁর বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দ্বিতীয় চিঠিতে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর আবুল কালাম আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ব্যাপারে এই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুটি চিঠিতেই মামলা করার জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিঠির অনুলিপি রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে এজাহারের অনুলিপিসহ তা ইসিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠির অনুলিপি রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছেও পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন, ‘রাতের চিঠির প্রেক্ষিতে দুপুরে আমি থানায় একটি এজাহার দিয়ে এসেছি। এদিকে আমি নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণে ব্যস্ত। শুনলাম মামলা করার জন্য আরেকটি চিঠি এসেছে। আরেকটা মামলা করতে হবে।’
রাজশাহীর এসপি সাইফুর রহমান বলেন, ইসির চিঠির অনুলিপি তিনি পেয়েছেন। মামলা রেকর্ড হওয়ার পরই ইসিকে অবহিত করা হবে। মামলার এজাহারের অনুলিপিও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
রাজশাহী-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন।
আর এ আসনের কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক ২০০৮ সাল থেকেই এলাকার সংসদ সদস্য। পর পর তিনটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে করলেও এবার মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি।
আবুল কালাম আজাদ মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই সভা-সমাবেশে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কালামের বিরুদ্ধে অন্তত ১৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তাঁকে বেশ কয়েকবার কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় এ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। তারপরও তিনি সংযত হননি। শেষে গত সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিতে সুপারিশ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।